আধুনিক বেগুন চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

প্রিও পাঠক আপনারা হয়তো আধুনিক বেগুন চাষের সঠিক তথ্য জানতে চাচ্ছেন কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না, আসুন আমি আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সঠিক তথ্য জানানোর চেষ্টা করবো তাই আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো ৷
প্রিও দর্শক আরও বিশেষ কিছু অজানা তথ্য বা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করবো যার মাধ্যমে সকল কিছু জানতে পারবেন, তাই আর্টিকেলটি ভাল করে পড়ুন।

 ভূমিকা

বেগুন চাষিরা বেগুন চাষের্ সঠিক পদ্ধতি না জানার কারনে অনেক সময় হতাস হন,বেগুনের রোগ দমন , বেগুনের জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য  সঠিক সময় সার দেওয়া আধুনিক বেগুন চাষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ অত্যন্ত ভুমিকা পালন করে।

বেগুন খাওয়ার উপকারিতা

বেগুন একটি অন্যতম খাবার যা আমরা প্রতিদিন খাবারে সবজির তালিকাই রাখি। এই বেগুন সহজে কেটে রান্না করা যাই এবং অনেক রকম ভাবে রান্না করা যাই যেমন ভাজি করে, ভর্তা করে ও বেগুনের তরকারি। এই বেগুনের সব্জির অনেক পুষ্টি গুন ও উপকারিতা রয়েছে যা অনেকেই জানেন না চলুন যেনে নিই বেগুন খেলে কি উপকার হয়।

ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগাজিন এর উৎস হল বেগুন।বেগুন হাড় সুস্ত রাখে এবং শিশুদের কে বেগুন খাওয়ালে অনেক উপকার হয়। তবে যদি অ্যালার্জি হয় তাহলে ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে আর সেই সাতে শিশুদের বেগুন খাওয়ানো বন্ধ রাখতে হবে।
রক্তকে কে শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে, যাদের ডায়াবেটিক স আছে এবং ডায়াবেটিকস হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের কে নিয়মিত বেগুন খেতে হবে তাহলে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

 বেগুণ খেলে মানুষের শরীরে যে ক্যান্সার রোগের যে কোষ তৈরী করে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

বেগুনে এক ধরনের অ্যান্থোসায়ানিক নামক যৌগ্য থাকে এবং এটি এক ধরনের বৈশিষ্ট্য যুক্ত অ্যান্টিঅক্সডেন্ট বা রঙ্গক যা থেকে বেগুনের রং ফুটিয়ে তুলতে পারে। এই যৌগ অনেক উপকারী,এবংএটি টিউমার কোষ গুলো পরিপূর্ণ ভাবে মেরে ফেলতে সাহায্য করে।

বেগুণ খওয়ার অপকারিতা

অ্যালার্জির কারণঃ বেগুন মানুষের শরীরের জন্য অ্যালার্জির কারন হতে পারে।
আয়রনঃ বেগুন খেলে মানুষের শরীরের বিভিন্ন আয়রনের ঘাটতি হতে পারে।
 
বেগুন খাওয়ার ফলে কিডনি সমস্যা হতে পারে এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেগুনখেলে মানুষের বমি-বমি ভাব হতে পারে। ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্যে করে। রক্তের কলেস্টেরলে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আধুনিক বেগুনের চাষ পদ্ধতি

আধুনিক বেগুনের চারা তৈরি বীজ ফেলে চারা রোপণের পর তৈরি করা মূল জমিতে বপন করতে হবে, এমন একটি স্থানে তৈরি করতে হবে যেখানে খুব সহজে পানি নিস্কাসন করা জাই, এবং ছায়া মুক্ত ও সুবিধা জনক হতে হবে।বিশেষ কোরে শীতকালে বেগুনের ফসল ফলানোর জন্য বীজ বোনা হয়।

উর্বর মাটি হলে বীজ বোনা ভালো হয়,আর যদি উর্বরতা কম হয় তাহলে সামান্য জৈব সার ও ফসফেট জাতীয় সার প্রয়োগ করতে হবে।

এবং পাশাপাশি দুটি বীজের মধ্যে ৫০/৬০ সে:মি: রাখতে হবে,বেগুনের চারার বয়স ২০/৩০ দিন হলে দেখতে হবে যে বেগুনের বীজে৩/৪ টি পাতা হয়েছে কিনা যদি হয় তাহলে জমিতে বোনতে হবে,বীজ তলার জন্য গোবর ও টি এস পি সার ব্যবহার করতে হবে।

আধুনিক বেগুনের সার প্রয়োগমাটি থেকে অনেক খাদ্য উপাদান শোষণ করে এই আধুনিক বেগুন গাছ,তাই সামান্য সার প্রয়োগ করে ও বেগুনের ফলন ভালো হয়।তবে জমির উর্বরতা দেখে সার কিপরিমান দিতে হবে সেটি নির্ধারণ করতে হবে। গোবর বা কমপস্ট সার আধুনিক বেগুনের মাটির জন্য খুব ভালো, চারাগাছ লাগানোর আগেই এগুলো দিতে হয়।

এবং সার গুলো মাটির সাতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে চারাগাছ লাগানোর ১৫/১৬ দিন পরে যখন ফুল বা ফল আশা শুরু করে তাহলে আহরনের সময় ইউরিয়া সার দিতে হবে।
আধুনিক বেগুনের পরিচর্যাআগাছামুক্ত ও মাঝেমধ্যে নিড়ানি দিয়েই আধুনিক বেগুন গাছের পরিচর্যা করতে হবে। চারাগাছ রোপনের ৩/৪ দিন পরে হালকা পানি সেচ দিতে হবে শীতকালে হালকা পানির প্রয়োজন হলে ও বর্ষাকালে প্রয়োজন হয় না।

 আধুনিক বেগুন গাছ বেশি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না,পানি সেচ দেওয়ার পর বেগুন গাছের গোড়ালি সামান্য ভিজলেই পানি না আটকিয়ে ছেড়ে দিতে হবে।

আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের আধুনিক বেগুন পাওয়া যাই, চাষিরা সারা বছর এই বেগুনের চাষ করে থাকে কিন্তু বর্ষাকালে বেগুনের চাষ ভালো হয় না, যতটা শীতকালে ভাল হইয়া থাকে আধুনিক বেগুনের ফলন ভালো পেতে সঠিক ভাবে চাষ করা প্রয়োজন।

এছাড়া ও দোআঁশ ও বেলে মাটি বেগুন চাষের জন্য খুবই উপযোগী এই জমি গুলো ভাল করে হাল মই করে নিতে হবে এবং মাটি গুলো সমান হতে হবে।
হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন বেগুন চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন বেগুন শ্রাবণ মাস হতে আশ্বিন মাস পর্যন্ত চাষ করার উত্তম সময়ই এবং মাটি বালি ও  কমপোস্ট সমপরিমানে মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে। ভালো চারা পাওয়ার জন্য প্রথমে বীজতলাই একটি বীজ বুনতে হবে, গাছ গজানোর ৭/১০ দিন পর প্রথম চারা তুলে দ্বিতীয়  বীজতলায় রোপন করতে হবে।

টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি

ড্রাম বা টব  ভালোভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে,অতিরিক্ত পানি জমে না থাকতে পারে সেজন্য টবের নিচে ছোট ছোট ছিদ্র করে নিন যাতে পানি বের হতে পারে।তারপর টবে মাটি দিতে হবে, এবং তবের মাটিতে চারা বা বীজ লাগাতে হবে। টবটি রোদে রাখতে হবে, টবে পানি সেচ দিতে হবে, সেই সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, এবং বেগুন গাছে ফুল ফোটার পর ফল ধরতে শুরু  করবে। 

পার্পল কিং বেগুন চাষ পদ্ধতি

পার্পল কিং চারা এমন চারা যা ৬০/৭০ দিনপর ফলন তোলা যায়,যে সকল জমিতে জমে থাকে না অর্থাৎ উচু জমি সে সব জমিতে পার্পল কিং বেগুন চাষ ভালো হয় এবং দুই বছর বেছে থাকে।প্রতি গাছ থেকে ১০/৩০ কেজি  পাওয়া যায়। এ বেগুনে তেমন পোকামাকড় লাগে না এবং কীটনাশক সার প্রয়োগ করতে  হয় না।

আধুনিক বেগুনের পোকা দমন

এই বেগুনে গোড়া পঁচা ও হেলে পড়া এই দুটি মারাত্মক রোগ দেখা যায়,উষ্ণ ও আর্দ আবহাওয়া এবং অধিক তাপে এই রোগ বৃদ্ধি পাই।যখন আধুনিক বেগুন গাছের পুষ্টির অভাব হয় তখন এর ব্যপকতা বৃদ্ধি পাই যখন বেগুনের নিচের পাতায় দাগ দেখা যায় তখন সেটা গোল বা বাদামি রঙের হয়ে থাকে। যে পাতা বেশি খারাপ হয় সে পাতা হলুদ রঙের হয়ে যায় এবং সেই পাতা ঝরে পড়ে যায়, কোন বেগুন আক্রান্ত হয় তাহলে তারাতাড়ি পচে যায়।

দমনের ব্যবস্থপোকার আক্রমণ থেকে বেগুন গাছ বাঁচাতে হলে ৫ মিলি ট্রিকস্ ও নিম তৈল পানির সাথে মিশিয়ে বেগুন গাছের গোড়ালি তে দিতে হবে। পোকা বেগুন গাছের ডগা এবং ফলকে নষ্ট করে দেয়। কয়েক দিন পর পর আক্রান্ত ডগা কেটে ফেলতে হবে তাহলেই পোকার বংশবৃদ্ধি কমে যাবে।
আধুনিক বেগুনের রোগের প্রতিকার রোগে আক্রান্ত গাছ দেখলে সেটাকে তুলে ফেলতে হবে, গাছের গোড়ালির বয়স্ক পাতা গুলো ছিড়ে ফেলে দিতে হবে। ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম টিমসেন বা ২ গ্রাম ব্যভিস্টিন দিতে হবে আবার ২/৪ বার ডাইথেন দিয়ে রোগের প্রতিকার করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায় যে,কোন প্রকার বেগুন বা সব্জির ফসল চাষ করতে হলে যত্ন সহকারে করতে হবে, এবং সকল বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে তবেই চাষিরা ভালো ফসল ফলাতে পারবেন।এবং অনেক লাভবান হবেন।এই আর্টিকেল টি  যদি আপনাদের  ভালো  লাগে তাহলে  বন্ধু  বা আত্মীয় স্বজনের কাছে শেয়ার করে দিবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url